All Categories

About Owner

- Shahinur Alam

রেড ফ্রাইডের পথ চলা শুরু হয় ৫জন বন্ধুর হাত ধরে ২০১৩ সালে। বন্ধুত্বের নেপথ্যে ছিল 'পাঠশালা'- পুরো উপমহাদেশে খ্যতি কুড়ানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা মিডিয়া জগতের ক্ষেত্রগুলোর (অভিনয়, উপস্থাপনা, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, সাংবাদিকতা) প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যাপীঠের আঙ্গিনায়-বারান্দায় হাঁটাচলা আর খুনসুটি করতে করতেই বন্ধুত্ব অনিক, শৈলী, স্টিভেন, প্রিয়ম আর আমার । যতদূর মনে পড়ে, রেড ফ্রাইডের ধারণাটার শুরুর মুহূর্তটা ছিল এমন - আমরা পাঁচজন পাঠাশালার ক্লাস শেষে পান্থপথের দিকে হাঁটছি। হঠাৎ বলে উঠলাম-

“চল এক সাথে কিছু করি! এখনতো আমরা সবাই বেশীরভাগ সময় একসাথেই আড্ডায় কাটাই। মাঝে সেই 'কিছু' দিয়ে যদি আমাদের প্রতিদিনের ঘুরে বেড়ানোর খরচটা অন্তত বের হয়ে আসে তাহলে তো খুব ভালো
হয়।” দেখি সবাই আমতা আমতা করতে করতে রাজি হয়ে গেল।

এবার ছিল ভাবার পালা - কী করা যায়!! পাঁচজনের কমন সাধ-আহ্লাদ যেহেতু ছিল একটাই- ফটোগ্রাফি, সুতরাং স্বপ্নের সিঁড়ি ভাঙ্গা শুরু করলাম ফটোগ্রাফির পথেই। ঠিক করলাম, পাঁচজনে মিলে গড়ে তুলবো
একটা সার্বজনীন ফটোগ্রাফিক ক্লাব। এখন প্রথমেই দরকার ছিল একটা নাম...

আনুমানিক তিন মাস লেগে যায় আমাদের আজকের এই রেড ফ্রাইডে নামটি সিলেক্ট করতে। অনেক নামের ভিড়ে ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী রেড ফ্রাইডে নামটি পাই। তারপর শুরু হল কোম্পানির লোগো ডিজাইন, ডোমেইন-হোস্টিং কেনা, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ফেসবুক সিক্রেট গ্রুপ তৈরী করা এবং তা সাজানোর কাজ। সব কিছু কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে গেলেও লোগো ডিজাইনে সময় লেগে যায় প্রায় ২.৫ মাসের মত। এরপর আমরা লেগে পড়ি বিজ্ঞাপনের কাজে; কিন্তু দুঃখের বিষয়, নাম নির্ধারণ ও লোগো ডিজাইনে সময় বেশি লেগে যাওয়ায় শৈলী তার নিজের অনলাইন শপ 'শৈলী' কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতা-নেপাল-বাংলাদেশ করতে করতে রেড ফ্রাইডেতে তেমন সময় দিতে পারছিল না। তাই সে আমাদের সাথে আলাপ করে রেড ফ্রাইডে গ্রুপ থেকে বের হয়ে যায়। স্বপ্নযাত্রার শুরুতেই খেলাম ধাক্কা! অথচ আজকের এই “রেড ফ্রাইডে' নামটি শৈলীরই দেওয়া, আর লোগোটা আমাকে উপহার দেয় বড় ভাই শিশির।

মরার উপরে খাঁড়ার ঘা - শৈলীর সাথে সাথে আমরা আর এক রোমিও বন্ধু প্রিয়মকেও হারালাম। অগত্যা আমরা তিনজনেই কিছু কিছু করে জিনিস কেনা শুরু করলামঃ লাইট সেটাপ, রিফ্রেক্টর, কার্ড ডিজাইন, পোস্টার, ব্যানার, ইত্যাদি। ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আর প্রান্তে ছুটে চললাম এসবের কাজে।

এই ভাবে আরও কয়েক মাস কেটে যায়, হাতে তেমন কোন কাজ না পাওয়ায় খরচ সামলাতে আমি রীতিমত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ স্টিভেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে শুনলাম, সে তার বিয়ে ও ক্যারিয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে রেড ফ্রাইডেতে সময় দেওয়া তার পক্ষে নাকি আর সম্ভব না৷

একেবারে হতাশ হয়ে পড়লাম এভাবে এক এক করে সবাইকে চলে যেতে দেখে। অথচ এদিকে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি 'রেড ফ্রাইডে" র জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিব বলে; অনিকও ঠিক তা-ই। পাঠশালার পড়াশুনার খরচ, ক্লাস করা, আবার রেড ফ্রাইডের এই বেহাল দশায় আমার রীতিমত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা। এমন অবস্থা দেখে ধীরে ধীরে অনিকও তার ক্যারিয়ার এবং গার্লফ্রেন্ডের জন্য রেড ফ্রাইডেতে সময় দেওয়া কমিয়ে দেয়- এক সময় একবারে বন্ধই করে দেয়! !

তারও আর কী-ই বা করার ছিল! আসলে আমরা দুজন এক সাথে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু করবো বলে। কিন্তু পেটে খুদা নিয়ে আর কত দিন? অনিক রেড ফ্রাইডে থেকে চলে যাওয়ার পর সবসময় আমাকে সাহস দিয়ে গেছে আমার খুব কাছের মানুষ 'শাহা”। রেড ফ্রাইডের ওয়েবসাইট ডিজাইনটা তারই করে দেওয়া।

এভাবে মালগাড়ির মত চলতে চলতে এক সময় আবু নাসের ভাই এর অফিসে পরিচয় হয় সৈকত ও বিপ্লব ভাই-এর সাথে। কিছুদিন পর তাদের নতুন সৃটুডিও-কাম-বাসাতে আমি তাদের সাথেই যোগ দেই। জায়গাটা
ছিল মিরপুর ডিওএইচএস।

আমার জীবনে উল্লেখ করার মত এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয় ডিওএইচএস-এ; বলা উচিত জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান, অবিস্মরণীয় আর অভিজ্ঞতা ভরপুর সময় পেয়েছি এখানে। যদিও বা রেড ফ্রাইডেকে এখানে থেকে টেনে তুলতে পারিনি, কিন্তু বড় ভাইদের কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু যার কারণে আজও আমি হেঁটে চলেছি পথ!! আজকের এই 'আমি' অনেকটাই তাদের ভালবাসার ফল। সৈকত, বিপ্লব, হ্থমায়ুন, মেহেদী, বাবু, হিমেল ও আবিদ ভাইদের কাছ থেকে বাস্তব জীবনের অনেক অনেক অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা, সাহস, শিক্ষা পেয়ে আমি ধন্য।

সেই সাথে ফুয়াদের সেই গানের মত আমিও পড়লাম ফাঁদে - "দুই দুইটা গার্লফ্রেন্ড লইয়া পড়ছি আমিফান্দে”।

এমন সময় রেড ফ্রাইডের সেই বেহাল দশা দেখে রবিন নামের এক স্বপ্নবাজ এগিয়ে আসে। রবিন শেয়ার পার্টনার হিসাবে অংশগ্রহন করে এবং তারপর নতুন করে শুরু হয় আমাদের পথচলা। এর মাঝে আমার ঝুলিতে যোগ হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা। সাথে পাঠশালার বিদ্যায় আমিও হয়ে উঠেছি অনেকটা পরিপক্ক। এগুলোকে পুঁজি করে কিছুদিনের মধ্যেই বেশ কিছু ইভেন্ট আর ওয়েডিং এর কাজ করে ফেললাম। পেতে লাগলাম পথ চলার নতুন উদ্দীপনা।

কিন্তু হঠাৎ করেই রবিন একটি সিনেমায় ডিজাইনার হিসাবে কাজের সুযোগ পাওয়ায় বিরিশিরি চলে যায়। আর আমিও "দ্য ডেইলী স্টার' নিউজপেপারের সেলিব্রেটিং প্রোগ্রামে নিজেকে জড়িয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করা শুরু করি।

কয়েক মাস পর সেলিব্রেটিং প্রোগ্রামের কাজ শেষ করে ফিরে এসে নাটক ও টেলিফ্লিম বানানোর কাজে যোগ দিলাম। রবিনও তার সিনেমার কাজের শেষে নিজের 'মাটির ঘর” নামের রেস্টুরেন্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে শুরু করে। রেড ফ্রাইডের পথচলায় আবারও ঘটে দীর্ঘ ছন্দপতন।

এমন সময় ঢাকায় আমার এক বাইক এক্সিডেন্টে জীবনের সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। পা ভেঙ্গে পড়ে থাকি বাড়িতে কয়েক মাস। সুস্থ হওয়ার পর বাবা-মার চাপে বিয়ে করে ফেলি এবং বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করতে থাকি।

চোখের সামনে শেষ হয়ে যায় আমার ঢাকার খেয়ালী জীবন। বদলে মাথায় চেপে বসে বাবার ব্যবসার গুরুগস্ভীর দায়িত্ব সাথে নিজের ঘরে আসা নতুন বউয়েরও দায়িত্ব। সবকিছুকে খুব সহজে মেনে নিতে না
পারলেও এগুলোই আমার সাথে ঘটে যাচ্ছিল। নিজেকে বারবার বুঝিয়েছি যে, এই জীবনই এখন আমার জন্য নির্ধারিত! তবে এসবের মাঝেও ছবি তোলা বন্ধ করি নাই। ব্যবসার মার্কেটিং করি, ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলি। এভাবেই কাটতে লাগল দিন।

এরমধ্যে একদিন আমার আব্বুর গায়ে একটি পাঞ্জাবী দেখে খুব ভাল লেগে গেল। বড়ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম সে এটা কথা থেকে কিনেছে? ভাই বলল, কাপড় কিনে নিয়ে বানানো। শুনে আমি বেশ উৎসাহ বোধ করলাম। পরদিন আমি ভাইকে নিয়ে চলে গেলাম বগুড়াতে কাপড় কিনতে। তার সেখান থেকে ৭টা পাঞ্জাবী বানালাম আমার, ভাইয়ের আর আব্বার জন্য। খুব উৎসাহ পেলাম বাড়ির সবার কাছ থেকে। বুঝতে পারলাম কিছু নতুন ধরনের ডিজাইনে এরকম পাঞ্জাবী তৈরি করতে পারলে অনেকেরই পছন্দ হবে। চিন্তা ভাবনা করে আমি আর আব্বা কিছুদিন পর আবার গিয়ে বেশ কিছু কাপড় কিনে আনলাম । শুরু হল ডিজাইন করে পাঞ্জাবী বানানো। আশেপাশের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া আর উৎসাহ পেতে লাগলাম‌। এভাবে একে একে ২৬টি পাঞ্জাবী বানিয়ে আশেপাশের মানুষদেরকে দেয়ার পরে ২৭ নাস্বার পাঞ্জাবীটা টিটু মামা কিনে নেয়। আমি অনলাইন পাগল মানুষ - সেটাই বা বাদ থাকে কেন!!! অনলাইনে বন্ধুবান্ধবদের কাছে জানানোর পর সেখান থেকেও প্রচুর সাড়া পেলাম। এভাবে অনলাইন থেকে ও এলাকার বন্ধুরা মিলে বৈশাখে মোট ৫৬টি পাঞ্জাবী কেনে।

আমরা সবাই ভাল কিছু প্রত্যাশা করি। কিন্তু ভাল কিছু প্রত্যাশা করার পিছনে উৎসাহ দেওয়াটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ভাল কিছু করার আশায় এসেছি, আপনাদের মাঝে "রেড ফ্রাইড" নিয়ে।

তাই বলি, "আপনাদের উৎসাহ আমাদের উন্মেচন"

এভাবেই আপনাদের উৎসাহ পেয়ে এক নতুন উদ্যোক্তার আবার নতুন করে জন্ম হয় 'রেড ফ্রাইডে'র ফ্যাশান হাউজের মধ্যে দিয়ে।

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Menu
Home
0 items Cart
My account